শুধুমাত্র বাংলাভাষী হওয়ার দায়ে, পশ্চিমবঙ্গবাসী ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ (১৬ জুন) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেওয়া এক ভাষণে মমতা বলেন, “শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য ওদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। লজ্জা করে না বিজেপির? নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার এটা করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।”

তিনি বলেন, আমার রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গ) প্রায় দেড় কোটি শ্রমিক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। তাদের বাংলাদেশি বলে হেনস্তা করা হচ্ছে। অথচ আমার রাজ্যেও অন্যান্য রাজ্যের শ্রমিকরা কাজ করে, আমরা তো তাদের কখনও হেনস্তা করি না।

‘কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাদের বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজকেও আমার কাছে খবর এসেছে, রাজস্থানে পশ্চিমবঙ্গের ৩০০ শ্রমিককে বাংলাদেশি বলে আটকে রাখা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘটছে, যেখান থেকে আমাদের সরকার তাদের উদ্ধার করেছে। ’

মমতা বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যারা বাংলা ভাষায় কথা বলছেন, তারা কী অপরাধ করছেন? তারা কি বাংলা ভাষায় কথা বলবেন না? অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে কি গুজরাটি বা হিন্দিতে কথা বলতে হবে? খুবই লজ্জাজনক বিষয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার রাজ্যের অনেককেই বাংলাদেশি বলে বন্দি রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশি বলে তাদের পুশ-ইন করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। এসব কী হচ্ছে?’

মোদী সরকারকে লক্ষ্য করে মমতা বলেন, ‘বাংলা ভাষায় যারা কথা বলেন, তারা কী অপরাধ করেছেন? স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—তারা কোন ভাষায় কথা বলতেন? তারা কি সব ভুলে গেছে? বাংলাকে দেখলেই কি অত্যাচার করতে হবে? তাহলে স্পষ্ট বলে দিক, বাংলা নিষিদ্ধ। ’

সোমবার নবান্নে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘আমরা কখনও বেআইনি কিছু করি না। গতকাল বাংলাদেশের হাইকমিশনার আমার কাছে এসেছিলেন। আমি প্রথমেই তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভারত সরকারের অনুমতি আছে কি না। তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ’

এদিন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক জায়গায় এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ ধরনের সংঘাতে জল, স্থল ও আবহাওয়ার দূষণ বাড়ছে। এসব বন্ধ করার জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা পররাষ্ট্র বিষয়, যা ভারত সরকারের অধীনে। তবে কূটনৈতিকভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে যুদ্ধ বন্ধ হয়। ’

মমতার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘বৈদেশিক ও কূটনৈতিক বিষয়ে কথা বলার আমার কোনো অধিকার নেই। আমি শুধুমাত্র বিশ্বের একজন উদ্বিগ্ন নাগরিক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করছি। ’

ভারতের ঐতিহাসিক কূটনৈতিক অবদান স্মরণ করে মমতা বলেন, ‘ভারতই প্রথম দেশ যারা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) স্বীকৃতি দেয়। সেসময় ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত আমাদের দেশে এসেছিলেন। রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি আমাকে এবং কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মাকে অ্যাঙ্গোলায় পাঠান। আমরা সেখানে সাহায্য করেছি। ’